পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায়

পায়খানার সাথে রক্ত পড়া একটি অস্বস্তিকর ও উদ্বেগজনক অভিজ্ঞতা। অনেকেই লজ্জার কারণে এই সমস্যাটি নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করতে চান না, ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও গ্রহণ করেন না। কিন্তু এই সমস্যার পেছনে ছোট কারণ যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, তেমনি বড় রোগ যেমন কোলন ক্যান্সারও লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই সময়মতো সতর্ক হওয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসা জানা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব কী কারণে পায়খানার সাথে রক্ত পড়ে, কিভাবে তা বন্ধ করা যায়, এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Healthy Foods
স্বাস্থ্যকর খাবার

এই পোস্টটি পড়ে আমরা যা যা জানবোঃ


পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কেন হয়?

অনেকেই হঠাৎ লক্ষ্য করেন যে টয়লেট পেপার বা মলে লালচে রক্ত এসেছে। একে হালকাভাবে নেয়া ঠিক নয়। এটি হেমোরয়েড, ফিশার, ফিস্টুলা, কোলন ইনফেকশন বা টিউমার এমনকি ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে।

পায়খানার সাথে রক্ত কি বিপদজনক?

হ্যাঁ, কারণ "পায়খানার সাথে রক্ত পড়া" দেহের ভিতরে কোনো ক্ষত বা প্রদাহের ইঙ্গিত দিতে পারে। যদি একবারের বেশি হয় বা একসাথে পেটে ব্যথা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া দেখা যায় তবে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।

হেমোরয়েড বা পাইলস

এটি হলো মলদ্বারে ফুলে যাওয়া রক্তনালী যা টয়লেট করার সময় ছিঁড়ে রক্তপাত করে। এর পেছনে মূল কারণ:

  • দীর্ঘক্ষণ চেপে ধরা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ডায়রিয়া
  • গর্ভাবস্থা

ফিশার বা মলদ্বারের চিরা

কঠিন মলের চাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলদ্বারে ফাটল হয়। এটি বেশ বেদনাদায়ক এবং পায়খানার শেষে লাল রক্ত দেখা যায়।

পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার সময় ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘরেই কিছু উপায় আছে যা তাৎক্ষণিক উপশম দিতে পারে:

  • সিটজ বাথ: হালকা গরম পানিতে ১৫ মিনিট বসে থাকুন।
  • কোনোভাবেই জোর করে মলত্যাগ করবেন না।
  • অতিরিক্ত চা-কফি কমিয়ে দিন।

কোন খাবারগুলো বন্ধ করবেন?

রক্তপাতের সময় নিচের খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:

  • মসলা বা ঝালযুক্ত খাবার
  • লাল মাংস
  • ফাস্ট ফুড
  • অতিরিক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
  • অ্যালকোহল ও ধূমপান

ঘরোয়া খাবার যা উপকারী

নিচের খাবারগুলো মল নরম রাখতে ও ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে:

  • কলা 
  • পাকা পেঁপে
  • ওটস
  • ইসবগুলের ভুসি
  • শাক-সবজি
  • লেবু পানি 
  • প্রচুর পানি 

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

  • যদি রক্তপাত ৩ দিনের বেশি হয়
  • রক্তের রঙ গাঢ় বা কালো হয়
  • বমি, মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা লাগে
  • আপনার বয়স ৪০+ এবং আগে কখনও এমন হয়নি

রক্ত বন্ধের জন্য ওষুধ

সতর্কতা: ডাক্তার ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না। তবে সাধারণত ব্যবহৃত কিছু ওষুধ:

  • Daflon 500mg
  • Lidocaine জেল
  • Pilex বা Pilemone ক্রিম
  • মল নরম করার সিরাপ (Lactulose)

অবশ্যই একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট বা প্রোক্টোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?

  • ক্রনিক পাইলস বা ফিশার হয়ে যেতে পারে
  • রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)
  • ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়া
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি (বিশেষত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার)

পায়খানার সাথে রক্ত পরা নিয়ে-শেষ কথা

পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কখনোই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। ছোট কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হলেও, সময়মতো চিকিৎসা না করালে তা বড় রোগে রূপ নিতে পারে। ঘরোয়া যত্ন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও মেডিকেল পরামর্শই এর সঠিক সমাধান। নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, অযথা লজ্জা না পেয়ে সাহস করে কথা বলুন এবং সুস্থ থাকুন।

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্ব


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার একটুখানি মন্তব্য আমাদের অনেক অনুপ্রেরণা দেয়। সুন্দর ও ভদ্র ভাষায় আপনার মতামত দিন

comment url